সিনহা হত্যা: ওসি প্রদীপের ফের রিমান্ড

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আসামি ওসি প্রদীপসহ তিন জনের ফের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
শুক্রবার বিকাল ৪টা ১০ মিনিটে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম (কক্সবাজার-০৪) তামান্না ফারা’র আদালত এ আদেশ দেন বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা।
এর আগে আসামিদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বিকাল পৌনে ৩টায় আদালতে আনা হয়।
তবে একটি মামলায় ১৫ দিনের বেশি র্যাবের হেফাজতে থাকা আইনের পরিপন্থি উল্লেখ আসামিপক্ষের আইনজীবীর দাবি, তার মক্কেল এরই মধ্যে ২০ দিন র্যাবের হেফাজতে থাকায় এখানে আইনে ব্যত্যয় ঘটেছে। তবে বাদীপক্ষের আইনজীবী এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে নারাজ।
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া এই তিন আসামিরা হলেন, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত।
১৮ অগাস্ট প্রথম দফায় আসামিদের র্যাবের হেফাজতে নিয়ে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
এ রিমান্ড শেষে ২৪ অগাস্ট আদালতে আনা হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। শুক্রবার তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জর করা হল। এতে তিন দফায় ১৪ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হল।
গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে ‘গাড়ি তল্লাশি’র সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।
এ ঘটনায় ৫ অগাস্ট সিনহার বোন শাহরিয়ার শারমিন ফেরদৌস বাদী হয়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতসহ নয় পুলিশ সদস্যকে আসামি করে টেকনাফ থানায় হত্যা মামলা করেন।
পরদিন ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, “মামলার অধিকতর তদন্তের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে ওসি প্রদীপসহ মূল অভিযুক্ত তিন আসামির বিরুদ্ধে চার দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তি-তর্ক শোনার পর প্রত্যেককে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
“দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে আদালতে আনা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের এএসপি খাইরুল ইসলাম তিন আসামিকে আরো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।”
‘একটি মামলায় ১৫ দিনের বেশি র্যাবের হেফাজতে থাকা আইনের পরিপন্থি’ উল্লেখ করে আসামি ওসি প্রদীপের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, “আসামিরা আজ (শুক্রবার) পর্যন্ত ২০ দিন র্যাবের হেফাজতে ছিল।”
এই ২০ দিন হেফাজতে থাকার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, গত ৬ অগাস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আদালতে আত্মসমর্পণের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। এর পরপরই তাদের র্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা আইনত সিদ্ধ ছিল। কিন্তু রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া ওসি প্রদীপসহ তিন আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব হেফাজতে নেয় ১৮ অগাস্ট থেকে।
“রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর ওসি প্রদীপসহ আসামিরা কার্যত কারাগারে থাকলেও র্যাবের হেফাজতে ছিল বলে আইনত গণ্য হয়। এখানে সেটির ব্যত্যয় ঘটেছে।”
রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পরপরই আসামিদের র্যাব হেফাজতে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল এবং এটি আইনের পরিপন্থি বলে দাবি করেন ওসি প্রদীপের এ আইনজীবী।
আদালতে সব ধরণের যুক্তি-তর্ক আসামিদের পক্ষে ছিল মন্তব্য করে আসামিপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, সিনহাকে গুলি ওসি প্রদীপ করেননি। ঘটনার সময় ওসি প্রদীপ ৩২ কিলোমিটার দূরে থানায় অবস্থান করছিলেন।
ঘটনার পরপর ওসি প্রদীপ ঘটনাস্থলে এসেছিলেন বলে এজাহারের বিবরণ উল্লেখ করে এই আইনজীবী বলেন, তিনি কীভাবে আসলেন? তাকে ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে দেখানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি যোগ করেন, ওসি প্রদীপ তো ছিলেন ৩২ কিলোমিটার দূরে, টেকনাফ থানায়।
যদি ঘটনাস্থলে না যেতেন, তাহলে কি বলা হতো না ওসি প্রদীপ ‘দায়িত্ব পালন করেননি?’ বলে পাল্টা প্রশ্ন করেন আইনজীবী আহসানুল হক।
ওসি প্রদীপের জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছিল উল্লেখ করে এ আইনজীবী জানান, আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করায় সেটির শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। এ নিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন জানাবেন।